ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ভাড়া কমিয়েও মিলছে না ভাড়াটিয়া

এম.এ আজিজ রাসেল :: করোনা সংকটে স্থবির পুরো দেশ। আয়-রোজগার নেই। দৈনন্দিন খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এই অবস্থায় ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে ভাড়াটিয়ারা। এতে খালি হয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ ভাড়া বাসা। বাড়ি ভাড়া কমিয়েও ওইসব বাসায় মিলছেনা ভাড়াটিয়া। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাড়িওয়ালারা।

রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার হাজার হাজার কর্মী কক্সবাজারে আসেন। তারা বিল্ডিং থেকে শুরু করে সেমিপাকা ও টিনশেটের বাড়িও ভাড়া করে নেয়। এতে হঠাৎ করে বেড়ে যায় বাড়ি ভাড়া। ১০ হাজার টাকার একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া গিয়ে উঠে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সেমিপাকা ও টিনশেট বাড়িরও ভাড়া বৃদ্ধি পায় তিন-চার গুণ।

যার কারণে বিপাকে পড়ে এনজিও ছাড়া অন্যান্য স্থানে চাকুরী করা কর্মজীবি মানুষেরা। অধিক দামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোন রকম চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু করোনা ভাইরাস মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য এক প্রকার আশির্বাদ হয়ে আসে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি খালি হতে থাকে ভাড়া বাসা। এনজিও সংস্থাসহ কর্মজীবি মানুষেরা বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অনেক ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালাকে না জানিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে নিরবে সটকে পড়ে।

সরেজমিনে শহরের টেকপাড়া, বাহারছড়া, পাহাড়তলী, সার্কিট হাউজ রোড, কলাতলী, তারাবনিয়ারছড়া, রুমালিয়ার ছড়া, আলির জাহাল, বিজিবি ক্যাম্প, নুনিয়ারছড়া, নতুন বাহারছড়াসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝুলানো হয়েছে, ‘ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে’ ভাড়াটিয়া চেয়ে ‘টু-লেট’ বা ‘বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে’ এ ধরনের লেখা। তবে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান টেকপাড়া এলাকার হাবিব নামে একজন বাড়িওয়ালা। অথচ গত ৩ মাস আগেও ওইসব বাড়ি ভাড়া পাওয়া দুস্কর ছিল।

বাহারছড়া এলাকার বাড়িওয়ালা আমিনুল ইসলাম বলেন, তার বিল্ডিংয়ে ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে ধীরে ধীরে খালি হতে থাকে ফ্ল্যাট। বর্তমানে শুধু ১২টি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া রয়েছে। ভাড়া ৫ হাজার টাকা কমানো হলেও ভাড়াটিয়া মিলছে না।

তারাবনিয়ার ছড়া এলাকার বাড়িওয়ালা হাসিবুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তার ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭টি খালি পড়ে আছে। বাকি ৫টিতে ভাড়াটিয়া থাকলেও গত তিন মাস ধরে তারা ভাড়া পরিশোধ করছেন না। আগের চেয়ে দুই হাজার টাকা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া থেকেই তার পরিবারের সব ধরনের খরচ বহন করতে হয়। এখন তার জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাহাড়তলী এলাকার বাড়ির মালিক হাসান জানান, তার ১০টি সেমিপাকা বাড়ি আছে। বর্তমানে মাত্র ৩টিতে ভাড়াটিয়া রয়েছে। বাকিগুলো খালি হয়ে গেছে দুই মাস আগে। ২টি বাড়ির ভাড়াটিয়া ৩ মাসের ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে গেছেন।

নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এইচ এম নজরুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, শহরের অধিকাংশ বাড়ির মালিক রোহিঙ্গা শিবিরের এনজিওতে কর্মরত ভাড়াটিয়া পেয়ে সাধারণ ভাড়াটিয়াদের গলা কেটেছে। করোনা এসব বাড়ির মালিকদের একটি উচিত শিক্ষা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও যাতে বাড়ির মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি রাখতে হবে।

পাঠকের মতামত: